বয়লার কি? বয়লার কাকে বলে?বয়লার কত প্রকার ও কি কি?

বয়লার কাকে বলে?

নিরাপত্তার ব্যবস্থাযুক্ত যে আবদ্ধ পাত্রে বায়ু মন্ডলের চাপ হইতে অধিকতর চাপে আগুনের সাহায্যে পানি হইতে বাষ্প তৈরী হয় এবং উৎপাদিত ঐ বাল্পে প্রেসার সৃষ্টি হয় তাহাকে বয়লার বলে


শিল্প কারখানায় বয়লার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতার প্রয়ােজন কেন?

বয়লার শিল্প কারখানার জন্য প্রাণ স্বরূপ। যান্ত্রিক ক্রুটির কারণে বয়লার বন্ধ হইলে সাথে সাথে সমগ্র কারখানাটি বন্ধ হইয়া উৎপাদন ব্যাহত হয়।আবার কোন কারণে বয়লার বিস্ফোরিত হইলে বয়লারের সাথে সংশ্লিষ্ট জান-মালের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়।
প্রথমে অবিভক্ত ভারতে বিভিন্ন শিল্প কারখানায় বয়লার স্থাপনের সাথে সাথে বয়লার বিস্ফোরিত হইয়া জান-মালের ক্ষতি সাধিত হইতে থাকিলে বয়লারের নিরাপদ চালনা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে সেই সময়ের বৃটিশ সরকার বয়লার আইন ১৯২৩ প্রণয়ন করেন।
উল্লেখিত আইন প্রয়ােগের মাধ্যমে শিল্প কারখানায় স্থাপিত বয়লারের সাথে সংশ্লিষ্ট জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আমাদের দেশে বয়লার আইন ১৯২৩ হতে অদ্যাবধি কার্যকর রহিয়াছে এবং উক্ত আইন অনুযায়ী
বয়লার পরিদর্শন দপ্তরের সার্টিফিকেট ছাড়া বয়লার চালান দণ্ডনীয় অপরাধ।

বয়লারের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদানের কারণ কি?

শিল্প কারখানার উৎপাদন বয়লারের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় বয়লারের নিরাপদ চালনা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হইয়া থাকে। 
কারণ আগুনের সাহায্য পানি হইতে বাষ্প তৈরী হওয়ায় এবং উৎপাদিত ঐ বাল্পে চাপ সৃষ্টি হওয়াতে বয়লার একটি বিপদজনক যন্ত্র। 
তাহাছাড়া, আগুন, পানি ও বাল্পের চাপের মধ্যে কিছুদিন বয়লার ব্যবহার করার ফলে স্বাভাবিক ভাবেই বয়লারের কিছু কিছু খুচরা যন্ত্রাংশ অকেজো বা দুর্বল হইয়া যায়।
 যাহা সাথে সাথে বদলী বা মেরামত করা অত্যাবশ্যক। তাহা না হইলে যে কোন সময় বয়লার বিস্ফোরিত হইয়া জান-মালের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।
 এই অবস্থায়, বয়লারের অকেজো বা দুর্বল খুচরা যন্ত্রাংশ বদলী বা মেরামত করার পর বয়লার পরিদর্শক কর্তৃক যথাযথ পরীক্ষা করিয়া উহার বাল্প চাপ সহ্য ক্ষমতা নির্ধারণপূর্বক বয়লারের নিরাপদ চালনা নিশ্চিত করিতে হয়।

বয়লারের গঠন প্রণালী

বয়লার মূলতঃ একটি শক্ত বা মজবুত ধাতব নির্মিত পাত্র বিশেষ, যাহা ড্রাম,টিউব, ফারনেস এবং সেলের সমন্বয়ে গঠিত।ইহার ফারনেস বা চুল্লিতে দহন ঘটাইয়া তাপ উৎপাদন করতঃ পানিকে বাল্পে পরিণত করা হয়। তাই বয়লারকে ষ্টীম জেনারেটর বা বাষ্প উৎপাদক যন্ত্র বলা যাইতে পারে।

বয়লারের ফারনেস বা চুল্লিঃ

বয়লারের কম্বাসসন এলাকার মধ্যে প্রধান অংশ হইল ফারনেস বা চুল্লি এবং ইহা প্রধান হিটিং সারফেস এলাকা। ইহার ভিতর জ্বালানী দহনের ফলে তাপ উৎপাদন হয় এবং উক্ত তাপ বয়লারের পানিকে বাল্পে পরিণত করে।চুল্লির ভিতরে কম্বাসসন চেম্বারের সম্মুখে ইটের ব্রিজ ব্যবহার করা হয়, ইহাকে ফায়ার ব্রিজ বলা হয়।ফায়ার ব্রিজ ব্যবহারের ফলে জ্বালানীর অপচয় কম হয় এবং বয়লারের কার্যক্ষমতা বেশী হয়। চুল্লি বা ফাররেস প্লেট সাধারণত ঢেউ খেলানাে হয়, ইংরেজীতে তাহাকে করােগেটেড প্লেট বলে।করােগেটেড প্লেটগুলি কয়েক প্রকার ধাতুর দ্বারা খুবই মজবুত করিয়া তৈরী করা হয়, কারণ ইহাই বয়লারের প্রধান হিটিং সারফেস হিসাবে কাজ করিয়া থাকে।চুল্লির ফায়ার বার কাষ্ট আয়রণ দ্বারা তৈরী এবং ইহা চুল্লির মুখ হইতে কম্বাসসন চেম্বারের দিকে ঢালু অবস্থায় থাকে। প্রাকৃতিক ড্রাফট ও ফোর্স ড্রাফটের জন্য ফায়ার বারগুলির মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফাঁকা রাখা হয়।

বয়লারে কেন চিমনী ব্যবহৃত করা হয়?

জ্বালানীর পুরাপুরি ব্যবহারের পরে উহার বর্জিত অংশ নিয়মতান্ত্রিকভাবে বায়ু মন্ডলে ছাড়ার জন্য বয়লারে চিমনী ব্যবহার করা হয়।
বিশেষ করে পােড়া ধোঁয়ার সাথে জড়িত উড়ন্ত ছাই, ময়লাযুক্ত ধোঁয়া টানিয়া বায়ু মন্ডলে নিক্ষেপ করা প্রয়ােজন। বয়লারের তাপীয় ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ফার্নেসে ড্রাফটের প্রয়ােজন হয়।প্রাকৃতিক বা নেচারাল ড্রাফট চিমনী উহার দ্বারা পরিচালিত হইয়া দহন ক্রিয়ার সাহায্য করে। চিমনী যত উচু হয় উহার ড্রাফটের ক্ষমতা তত বাড়িয়া যায়।বর্তমানে ইনডিউজড ড্রাফট পাখার সাহায্যে পােড়া ধাঁয়া সহজে অল্প সময়ে খাট বা নীচু চিমনীর দ্বারা বাহির করা হয়। চিমনীর মাধ্যমে পােড়া ধোঁয়াকে বাহিরে নিক্ষেপ করার শক্তি বাড়ানাের জন্য চিমনীতে পর পর ৩/৪টি ইনডিউজড ড্রাফট পাখা ব্যবহার করা হইয়া থাকে।বয়লারের উৎপাদন ক্ষমতা, ডিজাইন এবং প্রকার ভেদঅনুযায়ী চিমনী বিভিন্ন আকৃতির হয়। গঠন অনুযায়ী চিমনী সাধারণতঃ তিন প্রকার, যথাঃ

  • ১. ইট নির্মিত চিমনী (ব্রিক)।
  • ২. কংক্রিট নির্মিত চিমনী (কংক্রিট)।
  • ৩. ইস্পাত নির্মিত চিমনী (ষ্টীল)।

Comments